রেলওয়ের বর্ধিত মূল্যে টিকিট বিক্রি কার্যক্রম স্থগিত

Passenger Voice    |    ১০:০৯ এএম, ২০২৪-০৩-২৩


রেলওয়ের বর্ধিত মূল্যে টিকিট বিক্রি কার্যক্রম স্থগিত

ট্রেনের বাড়তি ভাড়া কার্যকরের কথা ছিল ১ এপ্রিল থেকে। সে অনুযায়ী গতকাল থেকে বর্ধিত ভাড়ায় ওইদিনের টিকিট বিক্রির কথা ছিল। তবে আসন্ন ঈদে যাত্রী অসন্তোষ তৈরি হতে পারে এমন আশঙ্কায় পরিকল্পনাটি আপাতত স্থগিত করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তবে ঈদের পর বর্ধিত ভাড়া কার্যকর হতে পারে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। ১৯৯২ সালে দূরপাল্লার যাত্রী ভাড়ার ওপর রেয়াতি সুবিধা চালু করে রেলওয়ে। মার্চের প্রথম সপ্তাহে রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদনের পর এ সুবিধা তুলে নেয়া হয়। নতুন ভাড়া নির্ধারণে কাজ করে বাণিজ্যিক বিভাগ। এরই মধ্যে টিকিট বিক্রি ও ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সহজ (জেভি) নির্দেশনা অনুযায়ী দূরত্বভিত্তিক নতুন ভাড়া নির্ধারণ করে। রেলওয়ের মার্কেটিং বিভাগ থেকে আগামী ১ এপ্রিল থেকে নতুন ভাড়া বাস্তবায়নে নির্দেশনা দেয়া হয়। ঈদের আগে টিকিটের বাড়তি চাহিদা থাকে। এর সঙ্গে বাড়তি ভাড়া যাত্রী অসন্তোষ তৈরি করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সর্বশেষ মঙ্গলবার রেলভবনের মার্কেটিং শাখার উপপরিচালক (মার্কেটিং) মো. মহব্বতজান চৌধুরী স্বাক্ষরিত চিঠিতে ১ এপ্রিল থেকে রেয়াত রহিত/প্রত্যাহারপূর্বক নতুন ভাড়া কার্যকর করতে বাণিজ্যিক বিভাগকে নির্দেশনা দেয়া হয়। এ হিসাবে ১১ দিন আগের রেলের অগ্রিম বিক্রি হওয়া টিকিটে আজ থেকে নতুন বর্ধিত ভাড়া কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। তবে মঙ্গলবারের নির্দেশনার পর বুধবার মৌখিক আদেশে ঈদের আগে বাড়তি ভাড়া আরোপের কার্যক্রম স্থগিত করতে বলা হয়েছে বাণিজ্যিক বিভাগকে। বাণিজ্যিক বিভাগগুলো নতুন ভাড়া আপাতত বাস্তবায়ন করছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘রেলের দূরযাত্রার টিকিটের ক্ষেত্রে আরোপিত রেয়াতি সুবিধা বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে দীর্ঘ দূরত্বে যাতায়াতকারীকে কিছুটা বেশি ভাড়া দিতে হবে। সিদ্ধান্ত হলেও নতুন ভাড়া কার্যকরের কোনো তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি। মন্ত্রণালয় থেকে যেভাবে নির্দেশনা আসবে সেভাবে বাণিজ্যিক বিভাগ সেটি কার্যকর করবে।’

রেলওয়ের তথ্যমতে, দূরযাত্রার রেয়াতি সুবিধার ভাড়া বাদ দিয়ে নতুন ভাড়া কার্যকরের একটি প্রস্তাব রেলওয়ের মাধ্যমে রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রস্তাবটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পেশ করতে একটি সারসংক্ষেপ প্রস্তুত করে রেলওয়ে। এতে স্বাক্ষর করেন রেলপথমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম ও সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর। ২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেলের ভাড়া বাড়ানোর এ প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেন। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর ৭ মার্চ রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সালাহ্উদ্দিন আহমেদ রেলওয়ে মহাপরিচালককে যাত্রী পরিবহনে রেয়াত প্রত্যাহার এবং অতিরিক্ত সংযোজিত কোচের টিকিট বিক্রিতে রিজার্ভেশন চার্জ আরোপ করতে চিঠি দেন।

রেলপথমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম বিভিন্ন অনুষ্ঠানে রাখা বক্তব্য ও সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ট্রেনের ভাড়া বাড়বে না বলে মন্তব্য করেন। এমনকি রেলভবনে সংবাদ সম্মেলন করেও এ বিষয়ে বক্তব্য দেন। মূলত রেলপথমন্ত্রী ও রেলওয়ের শীর্ষ কর্তাদের দুই রকম মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আপাতত ১ এপ্রিল থেকে যাত্রীবাহী ট্রেনের ভাড়াসংক্রান্ত নতুন নির্দেশনা বাস্তবায়ন পিছিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের মার্কেটিং বিভাগের কর্মকর্তারা।

রেলওয়ের তথ্যমতে, রেলে একসময় যাত্রী ও পণ্য পরিবহন ছিল সক্ষমতার তুলনায় কম। রেল খাতে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন আকৃষ্ট করতে ১৯৯২ সালে ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে দূরত্বভিত্তিক ও সেকশনভিত্তিক রেয়াত দেয়া হয়। যদিও ২০১২ সালে রেলওয়ের ভাড়া বৃদ্ধির সময় ‘সেকশনাল রেয়াত’ রহিত করা হয়। সম্প্রতি রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহারের মাধ্যমে রেলওয়ে যাত্রীবাহী ট্রেন থেকে বাড়তি ৩০০ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আয় বাড়ানোর চেষ্টা করছে।